এস এম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই উপজেলা প্রতিনিধি: ঋণের চাপে মাথা গোঁজার ঠাঁই ছেড়ে বৃদ্ধ মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আরাম সাখিদার পাড়ি জমিয়েছিলেন ঢাকা শহরে। সেখানে প্রায় এক বছর রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। সবজিনিসের দাম বাড়ার কারণে আর টিকতে না পেরে বাধ্য হয়ে গত শুক্রবার (১ নভেম্বর) সবাইকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়ি এসে দেখতে পান তার বাড়ি দখলে নিয়েছেন প্রতিবেশী এক প্রভাবশালী।কোনো উপায় না পেয়ে আরেক প্রতিবেশীর বাড়ির উঠানে খোলা আকাশের নিচে তিনদিন ধরে রাত্রিযাপন করছেন।
এমন ঘটনা ঘটেছে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আহম্মেবাদ ইউনিয়নের সুড়াইল গ্রামে।রোববার রাতে গিয়ে আরামের পরিবারের সদস্যদেরকে প্রতিবেশীর উঠানে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করতে দেখা গেছে।
আরামের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,আরাম দুইশতক জায়গার ওপর বৃদ্ধ মা-বাবাসহ পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। এরইমধ্যে আরামের মেয়ে রাবেয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই গ্রামের হবিবর রহমানের ছেলে রানার।সম্পর্কের জেরে গত তিন বছর আগে রাবেয়ার সঙ্গে রানার বিয়ে হয়।দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কও ভালো ছিল।এরইমধ্যে হবিবর জমি বিক্রির প্রস্তাব দেয় বিয়াই আরামকে।ধারদেনা করে চার শতক জমি কেনেন আরাম।সেখানে মাটির দেয়ালের বাড়ি নির্মাণ করেন।গত দেড় বছর আগে ভেঙে যায় দুই পরিবারের সম্পর্ক।বিবাহ বিচ্ছেদ হয় রাবেয়া-রানার মধ্যে।এই ঘটনা নিয়ে আরামসহ পরিবারের সদস্যদের মারপিট করেন হবিবর ও তার ছেলে।গ্রাম্য শালিসে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও দিতে হয় হবিবরকে।
ঋণের চাপে আরাম বাড়ী ছেড়ে যাওয়ার সুবাধে হবিবর ও তার ছেলে আরামের বাড়ির তালা ভেঙে নিজেদের দখলে নিয়েছেন।গত শুক্রবার আরাম ঢাকা থেকে এসে দেখে তার বাড়ী দখল হয়েছে।কোনো উপায় না পেয়ে তারা প্রতিবেশীর বাড়িতে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করছেন।
প্রতিবেশী নিজাম উদ্দিন বলেন,‘এদের বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই।এরা ছিন্নমূল।হবিবর ও তার ছেলে মারদাঙ্গা।এলাকার লোকদের কথা তারা শুনেনা। তিনদিন ধরে আরাম তার বৃদ্ধ বাবা-মাসহ সবাইকে নিয়ে এ অবস্থায় আছে।বাড়িতে ঢুকতে পারছে না।পুলিশ এসেছিল।কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।’
স্থানীয় আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন,‘এ বিষয়ে শুনেছি।হবিবর যেটা করেছে তা অন্যায়।একজনের বাড়ী আরেকজন জোরপূর্বক দখল করতে পারে না।’
আরাম বলেন,‘একদিকে ওদের অত্যাচার অন্যদিকে ঋণের চাপ।বাধ্য হয়ে সবাইকে নিয়ে বাড়ি ছাড়া হয়েছিলাম।এক বছর পর এসে দেখি বাড়িটা দখল করেছে।’কী কারণে বাড়ি দখল করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,'আমার জানা নেই,তাই থানায় অভিযোগ করেছি। আইন-ই এখন ভরসা।
অভিযুক্ত হবিবর রহমান বলেন,‘এক সময় আরাম আমার বিয়াই ছিল,তাই আমার জায়গা ওর নিকট বিক্রি করেছি তবে বাড়ি যে-পাশে করেছে দলিলে সেই পাশ উল্লেখ করা নেই।তাই বাড়ি আমি দখলে নিয়েছি।ওর জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে।এখন আরাম উল্টাপাল্টা যা বলছে তার সবই মিথ্যা।’
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন,‘বাড়ি দখলের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি।ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।